বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৬ অপরাহ্ন
মনিরুল ইসলাম শামিম : হবিগঞ্জ-১ (বাহুবল-নবীগঞ্জ) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। তার এ ইউটার্ন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও সাধারণ ভোটারের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে আর বদলে দিয়েছে ভোটের সমীকরণ। ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করতে গত শুক্রবার বিকালে দেশে ফিরে তিনি গণফোরামে যোগ দিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন ৮ জন। সে তুলনায় ঐক্যফ্রন্টে প্রার্থী সংখ্যা অর্ধেকের কম। ধারণা ছিল সাবেক এমপি আলহাজ শেখ সুজাত মিয়াতেই আস্থা রাখবে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু হঠাৎ রেজা কিবরিয়া ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হওয়ায় সুজাত-শিবিরে হতাশা দেখা দিলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেছেন, কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির স্বার্থে দল ও ফ্রন্টের সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন তারা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রেজা কিবরিয়া তার বাবার আদর্শ-অর্জন নষ্ট করতেই এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভোটে তার ভরাডুবি হবে।
বাহুবল থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম তালুকদার বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া বাহুবল-নবীগঞ্জ আসনটিতে ৯৬ থেকে এ আসনে কাজ করছেন। আমরা তাকেই ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে প্রত্যাশা করছি। তবে খালেদা জিয়ার কারামুক্তির স্বার্থে জোট ধানের শীষ প্রতীকে যাকেই প্রার্থী করবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করব।
বাহুবল থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাহুবল-নবীগঞ্জ-এর মাটি ও মানুষের নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া হবিগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হলে বিজয় নিশ্চিত। ঐক্যফ্রন্ট থেকে এ আসনে রেজা কিবরিয়া প্রার্থী হলে বাহুবল থানা বিএনপি তাকে প্রত্যাখ্যান করবে বলেও তিনি জানান। ড. রেজা কিবরিয়ার পিতা সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হবিগঞ্জ-৩ আসনে এমপি থাকাবস্থায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। রেজা কিবরিয়া ও তার পরিবারবর্গের প্রতি হবিগঞ্জ-৩ আসনের মানুষের সহানুভুতি রয়েছে। তাই হবিগঞ্জ- ৩ আসনে প্রার্থী হলে ঐ সহানুভুতি কাজে লাগিয়ে রেজা কিবরিয়া জয়ী হতে পারেন।
বাহুবল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই বলেন, শাহ এএমএস কিবরিয়া আওয়ামীলীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তিনি আওয়ামীলীগের এমপি থাকাবস্থায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় গ্রেনেড হামলায় মারা যান। তিনি আওয়ামীলীগের আদর্শের একজন সৈনিক ছিলেন। তার পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-বিএনপি’র নেতৃত্বাধিন ঐক্যফ্রন্টের হয়ে নির্বাচন করবেন- বিষয়টি বিস্ময়কর ও নিন্দনীয়।
বাহুবল উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী টেনু বলেন, ড. রেজা কিবরিয়াকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে একজন জ্ঞানী মানুষ হিসেবে চিনতাম। কিন্তু তার মাঝে ক্ষমতার এত লোভ তা জানতাম না। এ লোভ তাকে শেষ পর্যন্ত তার পিতার (সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া) রক্তের সাথে বেইমানী করতে বাধ্য করলো। তিনি বলেন, পিতার খ্যাতি বিক্রি করে যে কোন প্রতীকে নির্বাচন করলেই জনগণ তাকে ভোট দিয়ে বাক্স ভরে দেবে বলে ভেবে থাকলে আমি বলবো তিনি বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।
এ প্রতিনিধি উল্লেখিত বিষয়ে সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আব্দুল হান্নান রেনু-এর সাথে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ সদস্যরা জনগণের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকেন। যারা সর্বসময় জনসাধারণের মাঝে থাকেন, তাদের চাওয়া-পাওয়াসহ হাড়ির খবর রাখেন, তাদেরকেই এমপি পদে নির্বাচন করা প্রয়োজন। তাতে রাজনীতির মাঠের পুরখাওয়া মানুষরা নেতৃত্বে আসবেন এবং জনগণের চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু এমন রেওয়াজ শুরু হয়েছে যে, খ্যাতিমান ব্যক্তিরা হঠাৎ এসে দল ও জোটের মনোনয়ন নিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ওই খ্যাতিমান জনপ্রতিনিধিদের আপদে-বিপদে মানুষ কাছে পাচ্ছে না। এ রেওয়াজ ভাঙতে হবে।